জনি আক্তার মনি: সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার এক যুগেরও বেশি শাসনামলে গায়ে একটি আঁচড় লাগেনি তার। হামলা, মামলা ও কারাগারে থেকে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীরা যেখানে দিশেহারা, সেখানে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। আওয়ামী লীগ শাসন আমলে অর্থনীতিক মন্দায় পড়েননি তিনি। বরং ওই সময় ব্যাংক-ব্যালেন্স করতে ব্যবসা বাণিজ্য লুটপাটে, চাঁদাবাজীতে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও এমপির সহযোগী। কিন্তু এখন নিজেই সুনামগঞ্জের অপরাধ সাম্রাজের নিয়ন্ত্রক। এর পূর্বে অপরাধ সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, রঞ্জিত সরকার ও জেলা যুবলীগের সভাপতি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল। তারা পলাতক হওয়ায় এই সুযোগে অপরাধ জগতের ডন বনেছেন নুরুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগের পতনের পর লুটপাটের সব সাম্রাজ্য নিজের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছেন তিনি। তার সেই অপরাধ রাজ্য পরিচালনায় পাশে রেখেছেন কয়েকজন বিশ্বস্ত সহযোগি। তারাই এখন সুনামগঞ্জের পাথর, বালুমহাল, নদী পথের চাঁদাবাজি সবকিছুর মূলে। দেশের সর্বোচ্চ মানের বালু হিসেবে খ্যাত ধোপাজান ও জাদুকাটার বালু উত্তোলন, ভলগেট চাঁদাবাজি সবকিছুতে কাজে লাগিয়েছেন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল নামধারী কথিত ক্যাডারদের। অবৈধ পাথর কোয়ারি ব্যবসা দেখভাল করেন নুরুলের বিশ্বস্ত সহযোগীরা।
স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বিএনপির রাজনীতির আড়ালে নিজেই একটি বাহিনী গড়ে তুলেছেন নুরুল ইসলাম। এখন বিএনপি পরিচয়ে নুরুল সৈনিক হিসেবে খ্যাত ওই বাহিনী দিয়েই অপরাধ জগতের ডন হিসেবে আর্বিভূত হয়েছেন নুরুল ইসলাম।এছাড়া সীমান্তে চোরাচালান, অবৈধ পাথর, বালু ব্যবসা, জলমহাল দখলে স্থানীয় প্রশাসন আর নুরুলের মধ্যে সৃষ্টি হয় অঘোষিত সখ্যতা। প্রশাসন আর নুরুলের সখ্যতায় সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সেক্টরে শুরু হয় আওয়ামী আমলের ব্যবসা বাণিজ্যের হাতবদল। আওয়ামী লীগ নেতাদের বৈধ অবৈধ সবকিছু কব্জা করেন নুরুল ইসলাম। এসব নিয়ে সুনামগঞ্জ বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা এবং ছাত্রজনতার মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ।
এদিকে, হাজার হাজার ছাত্রজনতার রক্তে পাওয়ার নতুন বাংলাদেশের এমন কঠিন সময়ে বিএনপি নেতা নুরুল দলের দুর্বৃত্তদের দমন না করে নিজেই অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য, কমিশন, চাঁদাবাজিসহ আওয়ামী লীগের অপরাধ জগতে নিয়ন্ত্রণ নেয়ায় সুনামগঞ্জ বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে অস্বস্থি।