যাত্রাবাড়ীতে ৪ আগস্ট পুলিশের সঙ্গে আওয়ামীরাও সশস্ত্র হামলা চালায়

ক্রাইম; দর্পন; ক্রাইম দর্পন; crime; crimedorpon; crimedarpan; dorpon; darpan; The Weekly Crime Dorpon; the weekly crime darpan; crimedorpon.com;

আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের:

> আইন-আদালত

ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দিতে আপ বাংলাদেশের আলী আহসান জুনায়েদ

যাত্রাবাড়ীতে ৪ আগস্ট পুলিশের সঙ্গে আওয়ামীরাও সশস্ত্র হামলা চালায়

আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের: বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক এবং জুলাই যোদ্ধা আলী আহসান জুনায়েদ বলেছেন, ৪ আগস্ট যাত্রাবাড়ী এলাকায় আন্দোলনে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে আন্দোলনকারীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। সেখানে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ও আহত হন।

গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব কথা বলেন তরুণ এ রাজনীতিবিদ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠনের ইতিহাস টেনে এ জুলাইযোদ্ধা বলেন, ২০২৪ সালের ১ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ গঠন করা হয়। ধীরে ধীরে আন্দোলনে গতি আসে। ৬ জুলাই থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি দেওয়া হয়। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমনে ছাত্রলীগই যথেষ্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শয়ন বলেন, ছাত্রলীগ ফুঁ দিলে আন্দোলনকারীরা পাঁচ মিনিটেই উড়ে যাবে। ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম বলেন, আন্দোলন যাবে, আন্দোলন আসবে, কিন্তু ছাত্রলীগ থাকবে এবং সবকিছু মনে রাখা হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগ নির্মমভাবে সশস্ত্র হামলা চালায়।

তিনি আরো বলেন, এর প্রতিবাদে ১৬ জুলাই দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। ছাত্রছাত্রীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হন। ইতোমধ্যে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলায় রংপুরে আবু সাঈদ, চট্টগ্রামে ওয়াসিম, শান্ত ও ফারুকসহ মোট ছয়জনের শহীদ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ১৮ জুলাই আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ গুলি করে অনেককে হত্যা ও জখম করে। এছাড়াও আহতদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সেও গুলি করা হয়। সেদিন রাতেই ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

জুনায়েদ আরো বলেন, ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জের চিটাগং রোডে আন্দোলনরত অবস্থায় ছিলাম আমি। বিকালে মা হাসপাতালের সামনে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করলে সেখানে দুজন নিহত হন। তখন আন্দোলনকারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং মিছিল করতে থাকে। চিটাগং রোডের ভূমিপল্লির সামনে সম্ভবত বিজিবির হেলিকপ্টার থেকে মিছিলের ওপর গুলি চালানো হয়। সামনে থেকে র‍্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরাও গুলি চালান। সেখানে ২০-২৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ও আহত হন।

পরের দিনের কথা বলতে গিয়ে তরুণ এ রাজনীতিবিদ বলেন, ২০ জুলাই ৯ দফা নির্ধারণ লিখে তা পেনড্রাইভে করে বিভিন্ন মিডিয়ার কাছে পাঠানো হয়। ২১ জুলাই এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেখানে গণহত্যার দায় স্বীকার করে শেখ হাসিনাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানানো হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দুজন মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়।

যাত্রাবাড়ীতে হওয়া আন্দোলন প্রসঙ্গে এ জুলাইযোদ্ধা বলেন, আন্দোলন চলাকালে যাত্রাবাড়ী থেকে চিটাগং রোড এলাকায় শতাধিক ব্যক্তি নিহত হন ও কয়েক শতাধিক আহত হন। এ সময়ে প্রায় ১৩৪ জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়। দুই শতাধিক মামলায় প্রায় দুই লক্ষাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ জুলাই শোক দিবস ঘোষণা করা হলে আমরা আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করি। আন্দোলনকারীরা সরকার ঘোষিত শোক দিবস পালন কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে চোখে মুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করি এবং ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার আহ্বান জানাই। ১ আগস্টকে ৩২ জুলাই হিসেবে গণনা করার সিদ্ধান্ত নিই। পরবর্তী আগস্টের ৫ তারিখ পর্যন্ত ৩৬ জুলাই হিসেবে গণনা করা হয়। ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম। আমিসহ আরো অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলাম।

তিনি আরো বলেন, ৪ আগস্ট যাত্রাবাড়ী এলাকায় আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাই। সেদিন পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে আন্দোলনকারীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। সেদিন অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ও আহত হন। ওইদিন প্রথমে ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আমি সমন্বয়ক আসিফ ও সাদিক কায়েমের সঙ্গে কথা বলে কর্মসূচি এগিয়ে আনার পরামর্শ দিই। ৪ আগস্ট রাতে সমন্বয়ক আসিফ ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি একদিন এগিয়ে এনে ৫ আগস্ট করার ঘোষণা দেন।

জুনায়েদ আরো বলেন, ৫ আগস্ট সকালে আমি বাসা থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে যাত্রাবাড়ীর দিকে রওনা হই। সাদ্দাম মার্কেটের সামনে অনেক আন্দোলনকারী জড়ো হন। আমিও তাতে যুক্ত হই। সেখান থেকে মিছিল সহকারে আমরা কাজলা ফুটওভার ব্রিজের সামনে গিয়ে অবস্থান গ্রহণ করি এবং আন্দোলন চালিয়ে যাই। আন্দোলনকারীদের ওপর স্নাইপার, রাইফেল দিয়ে টার্গেট করে মাথায় গুলি করা হয়। আমি প্রায় ১৫ জনকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অনাবিল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে দেখেছি। আমরা জানতে পারি যে, ২টায় সেনাপ্রধান ভাষণ দেবেন। তখন আমরা আন্দোলনকারীরা বুঝতে পারি যে, শেখ হাসিনা সম্ভবত ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। আমি হ্যান্ড মাইকে আন্দোলনকারীদের মাঠ ছেড়ে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানাই। যাতে দেশে সামরিক শাসন আসতে না পারে, সেজন্য সজাগ থাকতে বলি। সেদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী থানার আশপাশ থেকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়। আমি এ হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের সবার বিচার চাই।

ট্রাইব্যুনালে গতকাল প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, বিএম সুলতান মাহমুদ । সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান, তারেক আবদুল্লাহসহ অন্যরা।