ওহি আহমেদ: বিএনপি-জামায়াতের বাস্তবতা ও ইসলামী রাজনীতির উপেক্ষিত শক্তি নিয়ে এক বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর মুখে একটি কথার পুনরাবৃত্তি প্রায়ই শোনা যায়—”আমরা বড় দল, তাই কিছু বিচ্যুতি থাকতেই পারে”।
এ কথাটি তারা বলেন যখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন স্তরের চাঁদাবাজি, গুণ্ডামি, কিংবা দলীয় সংঘাত নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—তাদের দল কি বাংলাদেশের জনগণের সংখ্যা থেকেও বড়?
যদি নিজেদের তথাকথিত ‘বড়’ দল বলে দাবি করে, তাহলে প্রশ্ন আরও গুরুতর—
যে দল নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা কীভাবে একটি দেশকে সুশাসনে পরিচালনা করবে?
তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়—”বড় দল” মানে কী?
জনসমর্থনের দিক দিয়ে বিএনপি হয়তো এখনো একটি বিশাল ঘাঁটি ধরে রেখেছে। কিন্তু চাঁদাবাজি, সহিংসতা বা দলীয় বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী তো সেই দলীয় নেতাকর্মীরা, জনসাধারণ নয়। যদি বিএনপি নিজেই দাবি করে যে তাদের সক্রিয় কর্মীবাহিনী সবচেয়ে বড়, তাহলে আমার বক্তব্য স্পষ্ট: এই দাবির সঙ্গে আমি একমত নই।
আজকের দিনে মাঠের কর্মী, সংগঠনিক কাঠামো এবং শৃঙ্খলার বিচারে জামায়াত কোনোভাবেই বিএনপির চেয়ে পিছিয়ে নেই—বরং অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে। যখনই সংকট এসেছে—সামরিক দমন-পীড়ন, রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, কিংবা নেতৃত্বশূন্যতা—জামায়াতের কর্মীবাহিনী এক অদ্ভুত সাংগঠনিক দৃঢ়তা দেখিয়েছে। কোনো ‘ক্যাশ ইনসেনটিভ’ বা ‘লোকভাড়া করে’ নয়—এই দল চলে আদর্শভিত্তিক সক্রিয় সদস্য দিয়ে, যারা সহজে মাঠ ছাড়ে না।
একদিকে আমরা দেখি জামায়াত প্রতিনিয়ত সুশৃঙ্খলভাবে হাজারো মিটিং, কর্মশালা, সাংগঠনিক সভা করে যাচ্ছে—চেয়ার ভাঙচুর নেই, মারামারি নেই, দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ নেই। অন্যদিকে বিএনপির অবস্থা হলো—একটি ইউনিট কমিটি ঘোষণা হলেই সেখানে শুরু হয় দ্বন্দ্ব, দখল, এমনকি মাঝে মাঝে খুনোখুনি পর্যন্ত।
এই হল বিএনপির কন্ট্রোল ক্ষমতা!
নিজেদের কর্মী-নেতাদেরই যদি সামাল দিতে না পারে, তাহলে রাষ্ট্রের প্রশাসন, নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা—এসব কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে?
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—চাঁদাবাজির সংস্কৃতি।
আমরা যদি খোলামেলাভাবে বলি, তাহলে স্বীকার করতেই হবে যে বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ প্রচলিত দলগুলোর বেশিরভাগ কর্মীই দল করে ব্যক্তি-স্বার্থসিদ্ধির জন্য। ক্ষমতার ভাগ, কমিশন, টেন্ডার, নিয়োগ বাণিজ্য—এসবই হয়ে ওঠে মূল প্রেরণা। এক নেতা যতক্ষণ চাঁদার ভাগ দিচ্ছে, ততক্ষণই তার নামে ‘জিন্দাবাদ’ স্লোগান ওঠে; ভাগ কমলেই রক্তাক্ত বিদ্রোহ হয়।
এর পুরো বিপরীতে জামায়াত ইসলামী আদর্শে গঠিত একটি ইসলামী সংগঠন। এখানে সদস্য হওয়ার আগে দীর্ঘ প্রস্তুতি, নৈতিক যাচাই এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেওয়া হয়। সদস্যরা ইসলামকে শুধু বক্তৃতার উপকরণ হিসেবে দেখে না, জীবনের বাস্তব নীতিমালা হিসেবেও গ্রহণ করে। ফলে তারা হারাম উপার্জনের ভয়াবহতা বোঝে, দলে একে অন্যকে ভাই হিসেবে দেখে, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহনশীলতার মাধ্যমে সংকটও সমাধান করে।
এটা কোনো ব্যক্তি বা দলের কৃতিত্ব নয়—এটা ইসলামী আদর্শের বাস্তব প্রভাব।
কেননা ইসলামে নেতৃত্ব মানে হলো দায়িত্ব, আমানত; ক্ষমতা মানে সুযোগ নয়, বরং জবাবদিহিতার জায়গা। এ কারণেই ইসলামী সংগঠনের মধ্যে যতই বৈষম্য হোক না কেন, সংগঠন ভেঙে পড়ে না—কারণ তাদের সংগঠন গঠিত হয় লোভ নয়, ঈমানের ভিত্তিতে।
এই বাস্তবতা জানার পরেও যখন কেউ বলে “জামায়াত অযোগ্য, তারা দেশ চালাতে পারবে না”, তখন একটিই প্রশ্ন জাগে—এই মূল্যায়ন কি আদর্শভিত্তিক, না প্রোপাগান্ডাভিত্তিক? আজ যারা সেক্যুলারিজম, জাতীয়তাবাদ বা তথাকথিত গণতন্ত্রের নামে দেশ চালাচ্ছে, তাদের ফলাফল তো চোখের সামনে—চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, দলে দলে সংঘর্ষ, ভাই ভাইয়ের গলা কাটছে!
এতকিছুর পরও ইসলামী আদর্শকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বাইরে রেখে কেবল ব্যক্তিগত ইবাদতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখে দেওয়া হচ্ছে। অথচ যেই আদর্শ ব্যক্তিকে নৈতিক রাখে, শৃঙ্খলায় বেঁধে রাখে, হারাম থেকে দূরে রাখে, সেই আদর্শকেই কি রাষ্ট্র পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নয়?
❖ কে আসলে বড়? জনসমর্থন, কর্মীসংখ্যা না শৃঙ্খলার মানদণ্ডে?
বিএনপি-জামায়াতের বাস্তবতা ও ইসলামী রাজনীতির উপেক্ষিত শক্তি নিয়ে এক বিশ্লেষণ
“বড় দল বলে চাঁদাবাজি চলবেই”—এই যুক্তি কতটা যুক্তিযুক্ত?
জনসমর্থনের দোহাই দিয়ে চাঁদাবাজি ও বিশৃঙ্খলা জায়েজ করা যায় না।
বিএনপি বড় দল, কিন্তু কীসের ভিত্তিতে?
সমর্থকের সংখ্যা আলাদা, কিন্তু যারা চাঁদাবাজি করে তারা দলীয় কর্মী ও নেতা।
মাঠের বাস্তবতায় জামায়াত কর্মীবাহিনী অনেক বেশি সক্রিয় ও শৃঙ্খলিত:
প্রতিদিন দেশজুড়ে হাজারো সভা-সমাবেশ হয়, কোথাও বিশৃঙ্খলা নেই।
বছরে হাজার হাজার কমিটি গঠিত হয়—অসাধারণ শৃঙ্খলার
