জনি আক্তার মনি: সম্প্রতি দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুরো জাতি স্তব্ধ। এমন একটি নিরাপত্তা-সংবেদনশীল স্থানে আগুন লাগা নিছক দুর্ঘটনা নাকি এর নেপথ্যে কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্র—এ প্রশ্ন এখন সর্বত্র ঘুরছে। যদিও প্রাথমিকভাবে কর্মকর্তারা বলেছেন এটি বৈদ্যুতিক ত্রুটি বা যান্ত্রিক সমস্যার ফল, তবুও ঘটনাস্থলের ভিডিও ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় বেশ কিছু অসামঞ্জস্য পাওয়া যাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে।
প্রথমত, বিমানবন্দর এমন একটি স্থান যেখানে নিরাপত্তা ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনা সর্বোচ্চ মানের হওয়া উচিত। সেখানে যদি সামান্য অসতর্কতা বা যান্ত্রিক ত্রুটিতেই ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে, তবে তা নিরাপত্তা ব্যবস্থার বড় ব্যর্থতা নির্দেশ করে। দ্বিতীয়ত, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে বা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অতীতে আমরা দেখেছি, গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনাকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে, যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।
তৃতীয়ত, তদন্তের স্বচ্ছতা ও দ্রুততার ওপর নির্ভর করছে জনমতের দিক। যদি তদন্তে বিলম্ব হয় বা তথ্য গোপনের চেষ্টা দেখা যায়, তাহলে জনগণের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হবে। এজন্য সরকারের উচিত একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে সিসিটিভি ফুটেজ, অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামের কার্যক্ষমতা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভূমিকা—সবকিছু খতিয়ে দেখা।
সবশেষে, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের একটি শিক্ষা নেওয়া দরকার—রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা কখনোই অবহেলা করা যাবে না। শুধু দুর্ঘটনার কারণ নির্ধারণ নয়, বরং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রযুক্তিনির্ভর অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নিয়মিত মহড়া ও তদারকি বাড়ানো জরুরি।
বিমানবন্দরের আগুন হয়তো আপাতদৃষ্টিতে একটি দুর্ঘটনা, কিন্তু নেপথ্যে যদি অন্য কোনো কারণ থেকে থাকে, তবে তা উদঘাটন করাই এখন সময়ের দাবি। জনগণ জানতে চায়—এটি কি শুধুই আগুন, নাকি আগুনের ছায়ায় লুকিয়ে আছে বড় কোনো বার্তা?
