ইয়াহইয়া আহমদ তানহার: বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড একটি ভয়াবহ সামাজিক অভিশাপে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষত পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয় যে, তারা গ্রেপ্তারের পর বা তথাকথিত “ক্রসফায়ার”-এর নামে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। অথচ সংবিধান ও আইন স্পষ্টভাবে বলে—কোনো নাগরিক অপরাধে অভিযুক্ত হলে তার বিরুদ্ধে আদালতেই বিচার হতে হবে।
কিন্তু বাস্তবে আদালতের পরিবর্তে পুলিশের বন্দুকই হয়ে উঠেছে বিচারকের আসন। এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন নিরীহ মানুষ, রাজনৈতিক কর্মী কিংবা বিরোধীদলের সমর্থকরা। মামলার তদন্ত, সাক্ষ্যপ্রমাণ কিংবা আদালতের রায়—এসব প্রক্রিয়ার তোয়াক্কা না করে বন্দুকের নলেই “বিচার” সেরে ফেলছে পুলিশ।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো—প্রতিটি ঘটনার পর পুলিশ একটাই ভাষ্য দেয়: “বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।” কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রতি ঘটনায় কেবল সন্দেহভাজন আসামিই কেন নিহত হন, পুলিশের কোনো সদস্য কেনো নিহত হন না? এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার দায় পুলিশের। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এই দায় এখনো চাপা থাকলেও ইতিহাস একদিন এর হিসাব চাইবেই।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বহুবার বলেছে—এটি আইনশৃঙ্খলা নয়, এটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। জনগণের করের টাকায় চলা বাহিনী যদি জনগণকেই হত্যা করে, তবে সেই বাহিনী গণবিরোধী হয়ে ওঠে। এভাবে দায় এড়িয়ে চলা যাবে না। রাষ্ট্র চাইলে এখনই স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে প্রতিটি বিচারবহির্ভূত হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে।
