আওয়ামিলীগ বিএনপির চাঁদাবাজদের মাধ্যমে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকছে অস্ত্র-গোলাবারুদ

ক্রাইম; দর্পন; ক্রাইম দর্পন; crime; crimedorpon; crimedarpan; dorpon; darpan; The Weekly Crime Dorpon; the weekly crime darpan; crimedorpon.com;

আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের: য়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে বানচাল করতে দেশে ভয়ঙ্কর নাশকতা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, কেপিআই এলাকা, গার্মেন্ট শিল্প এমনকি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করে নাশকতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সম্প্রতি চট্টগ্রামের ইপিজেড ও রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ দুটি ঘটনায় নাশকতার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ব্যাপকভাবে নাশকতাসহ বিভিন্ন ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী চক্রান্ত চলছে বলেও জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র।

সম্প্রতি ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশনে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি থেকে ৮টি অস্ত্র ও গানপাউডারসহ বিপুল গোলাবারুদ উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। ওই সময় সন্দেহভাজন চার যুবককে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, উদ্ধার করা অস্ত্র গোলাবারুদ নিঃসন্দেহে নাশকতার জন্যই আনা হয়েছে। অস্ত্র গোলাবারুদগুলো ভারতের চব্বিশ পরগনা থেকে আনা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। ট্রেনটি রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসলেও অস্ত্র-গোলাবারুদগুলো কয়েকটি হাত বদলে ঢাকায় আনা হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দুর্বল তদন্তের কারণে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখনো তৎপর না হলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ।

গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালে ছোটখাটো শক্তি নয়, বড় শক্তি কাজ করবে বলে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এবারের নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। হঠাৎ করে আক্রমণ হতে পারে। তবে যত ঝড়ঝাপটাই আসুক আমাদের তা অতিক্রম করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্য শোনার পর দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন জেগেছে, আসলে সামনের দিনগুলোতে কী ধরনের ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে।

এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ এন এম মুনিরুজ্জামান গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের যে ধরনের নিরাপত্তা থাকা দরকার, যে ধরনের গোয়েন্দা নজরদারি থাকা দরকার এবং যে ধরনের প্রতিহত ব্যবস্থা থাকা দরকার সে ব্যাপারে আমাদের অনেক দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। ঘটনা ঘটার পর আমাদের ওখানে গিয়ে কোনো লাভ নেই। ঘটনার আগে জানতে হবে আমাদের কী ধরনের ঘাটতি আছে সেগুলো পূরণ করতে হবে। শেখ হাসিনা একটি বিদেশী গণমাধ্যমকে যে কথাগুলো বলেছেন তা কি ইঙ্গিত করে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক নয়। তারা (আওয়ামী লীগ) বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড চালাবে নির্বাচন বানচাল করার জন্য। সেটাকে প্রতিহিত করার জন্য আমাদের সব ধরনের সক্ষমতা থাকতে হবে। আমাদের নজরদারি বাড়াতে হবে। গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে। বড় ধরনের নাশকতা এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ড করার প্রচেষ্টা করে তাহলে শুরুতেই তা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, নাশকতা ঠেকানোর সক্ষমতা এখনো আমরা দেখতে পাচ্ছি না সরকারের। সরকারকে আরো তৎপর হতে হবে। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তৎপরতা খুবই দুর্বল, সেটা অনেক বৃদ্ধি করতে হবে।

এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত বিজিবি কর্তৃক উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে এসএমজি-২টি, রাইফেল-১২টি, রিভলবার-২টি, পিস্তল-৩৬টি, অন্যান্য অস্ত্র-৬২টি, গুলি-১ হাজার ৭২৫ রাউন্ড, মর্টার শেল-৯টি, গ্রেনেড-১১টি ও ম্যাগাজিন-৩৯টি।

এ ছাড়া আইএসপিআর সূত্র জানায়, সেনাবাহিনী গত বছরের আগষ্ট থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে গত ১৬ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত অর্ধশতাধিক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, হাতবোমা, ককটেল, বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন কারাগার, থানা, ফাঁড়ি, বক্সসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট-স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুড়িয়ে দেয়া হয় থানা-পুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি। এসব জায়গা থেকে পাঁচ হাজার ৭৫৩টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়। গোলাবারুদ লুট হয় ছয় লাখ ৫১ হাজার ৮৩২টি। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া যৌথ অভিযানে চলতি বছরের ২৮ জুলাই পর্যন্ত চার হাজার ৩৯০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যানেই দেখা যায়, লুট হওয়া অস্ত্রের এক-চতুর্থাংশের বেশি উদ্ধার করা যায়নি।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছে। তার মধ্যে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসজুড়ে রয়েছে যমুনা ঘেরাও, হরতাল, অবরোধসহ নানা কর্মসূচি। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেফতারের সংখ্যা কমে যাওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়াও পাহাড়ে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি ঘোলা করা এবং সীমান্ত এলাকাগুলোতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডেরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে।