কাজী তৌফিক এলাহী তারেক (ছাতক প্রতিনিধি): বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সহিংসতা, ষড়যন্ত্র ও হত্যাকাণ্ডের ছায়া দীর্ঘদিনের। নানা রাজনৈতিক দলের উত্থান-পতনের সাথে সাথে জনগণের ওপর নেমে এসেছে নির্মম দমন-পীড়ন, চাঁদাবাজি, গুপ্ত হত্যা ও সন্ত্রাস। কিন্তু এই ইতিহাসে বিশেষভাবে আলোচিত ও প্রশ্নবিদ্ধ দল হলো বিএনপি—যাদের শাসনামলে ও রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে সংঘটিত হয়েছে অসংখ্য হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার ঘটনা। এই কলামে আমরা আলো ফেলবো সেই রক্তাক্ত অধ্যায়ের উপর, যা পরিচিত হয়ে উঠেছে “বিএনপির ১০০ খুন” নামে।
🔴 রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে রক্তগঙ্গা
২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময় থেকেই দেশে শুরু হয় ধারাবাহিক রাজনৈতিক নিপীড়ন। সংখ্যালঘু নির্যাতন, বিরোধীদলীয় কর্মীদের উপর হামলা, এবং প্রশাসনকে দলীয়করণের মাধ্যমে একটি ভয়ংকর রাজনীতি চালু করে দলটি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের উদাহরণ, যেখানে দেশের প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। এতে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন। এটি শুধু একটি হামলা নয়, বরং বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে সংগঠিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের জ্বলন্ত প্রমাণ।
🔴 নির্বাচন প্রতিহত করার নামে ২০১৩-১৫ সালের সহিংসতা
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন প্রতিহত করার নামে বিএনপি ও জামায়াত একসাথে দেশজুড়ে চালায় নৃশংস পেট্রোল বোমা হামলা। বাস, ট্রাক, রেলগাড়ি—সব কিছুই ছিল তাদের টার্গেট। শুধু ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে আগুনে পুড়ে ও হামলায় নিহত হন প্রায় ৯৫ জন সাধারণ মানুষ। আহত হন শত শত।
এই সময় দেশের মানুষ দিনরাত আতঙ্কে কাটিয়েছিল। স্কুলে যেতে ভয়, অফিসে বের হতে ভয়, কারণ কখন কে পেট্রোল বোমার শিকার হবে—তা কেউ জানত না।
🔴 গুপ্ত হত্যা ও হেফাজতের সাথে অঘোষিত আঁতাত
বিএনপি শুধু নিজেরাই সরাসরি সহিংসতায় জড়ায়নি, বরং বিভিন্ন মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথেও আঁতাত করে দেশকে অস্থির করার ষড়যন্ত্র করেছে। হেফাজতে ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ২০১৩ সালের মে মাসে ঢাকায় ভয়াবহ তাণ্ডব চালানো হয়। এই ঘটনায় পুড়েছে অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, শহীদ মিনার পর্যন্ত ছিল তাদের আক্রমণের টার্গেট।
🔴 এই খুনগুলো কাদের?
এই ১০০ খুন কোনো রাজনৈতিক নেতার নয়, বরং খেটে খাওয়া রিকশাচালক, নিরীহ গার্মেন্টস শ্রমিক, স্কুলগামী শিশু, সাধারণ যাত্রী—যারা শুধুমাত্র ভুল সময়ে ভুল স্থানে ছিলেন। এদের কারো কোনো রাজনীতি ছিল না। তারা শুধুই ‘নিহত’ হয়েছিলেন বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক হিংস্রতার শিকার হয়ে।
🔴 আজকের বাস্তবতা ও সতর্কতা
বিএনপির অতীত রক্তাক্ত এবং সহিংসতার ইতিহাসে ভরা। তারা গণতন্ত্রের নামে বারবার জনগণের জানমাল নিয়ে খেলেছে। তাই আগামী দিনে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে—রাজনীতির নামে আবার যেন কোনো অপশক্তি এদেশে রক্তপাত ঘটাতে না পারে।
শেষ কথা:
‘বিএনপির ১০০ খুন’ শুধুমাত্র একটি সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসাব নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক কালো অধ্যায়। আমরা চাই শান্তি, স্থিতি ও উন্নয়ন। সেই লক্ষ্যে অগণতান্ত্রিক ও সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।