৫ই আগস্ট পরবর্তী পুলিশের অনিয়ম,দূর্নীতি আর অপশাসন— জনগণের নিরাপত্তা না নিপীড়ন?

কাজী তৌফিক এলাহী তারেক : ৫ই আগস্টের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সেইদিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে যে সহিংসতা ও উত্তেজনা ছড়িয়েছিল, তা একদিকে যেমন উদ্বেগজনক, অন্যদিকে আরও গভীর চিন্তার বিষয় হলো — এরপর শুরু হওয়া পুলিশের অপশাসন, নির্যাতন ও হয়রানি।

পুলিশ রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাদের কাজ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং অপরাধ দমন। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, এই বাহিনী তাদের সাংবিধানিক দায়িত্বের বাইরে গিয়ে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক নির্দেশে কাজ করছে — বিশেষত বিরোধী মত দমন ও সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানোর ক্ষেত্রে।

৫ই আগস্টের ঘটনার পর সারাদেশে আওয়ামীলীগ,ছাত্রলীগ ও বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা দেওয়া হয়েছে। অনেক এলাকায় পুলিশ ‘সন্দেহভাজন’ নাম দিয়ে নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দিচ্ছে, এমনকি বাড়িতে হানা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের হেনস্তা করছে। এমন কর্মকাণ্ড দেশের সাধারণ মানুষকেও আতঙ্কিত করে তুলেছে। জনগণ মনে করছে, পুলিশ যেন এখন রাজনৈতিক ‘টুল’ হয়ে উঠেছে — সরকারের ইচ্ছা বাস্তবায়নের যন্ত্র।

বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট ও স্থানীয় পর্যায়ের বক্তব্যে উঠে এসেছে, অনেক পুলিশ কর্মকর্তা এই সময়ে ‘বাণিজ্যিক’ অপশাসনেও লিপ্ত হয়েছে। মামলা থেকে রেহাই পেতে হলে টাকা দিতে হচ্ছে, না হলে গ্রেফতার বা রিমান্ড নিশ্চিত। এটিকে আর শুধুমাত্র ‘আইনের প্রয়োগ’ বলা যায় না — এটি একধরনের ‘প্রাতিষ্ঠানিক সন্ত্রাস’।

আরও উদ্বেগজনক হলো, যেসব পুলিশ সদস্য অপেশাদার ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছেন, তাদের কোনো জবাবদিহি নেই। উচ্চপর্যায় থেকে না হয় মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু মাঠপর্যায়ে এসব কর্মকাণ্ডে মানুষের জীবন ও স্বাধীনতা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

একটি রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত না করে বরং ভয়ভীতি প্রদর্শন ও রাজনৈতিক দমন-পীড়নের হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তাহলে সেখানে আইনের শাসনের বদলে চলে আসে ভয় ও নৈরাজ্য। ৫ই আগস্টের পরবর্তী পরিস্থিতি আমাদের সেই সতর্ক সংকেত দিচ্ছে। জনগণের আস্থা ফেরাতে হলে পুলিশের অপশাসনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। আইন ও মানবাধিকারের রক্ষায় পুলিশকে পুনরায় জনগণের বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে — দলীয় বাহিনী হিসেবে নয়।