অহি আহমেদ: বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে এক নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে স্বাক্ষরিত বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিকে কেন্দ্র করে। অনেকেই এই চুক্তিকে ‘অসম’ বলে অভিহিত করছেন, যার ফলে দেশের অর্থনীতি একটি গভীর সংকটের মুখে পড়তে পারে। বিশেষ করে, বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের অত্যধিক দাম এবং চুক্তির বিভিন্ন শর্তাবলী নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
চুক্তির মূল সমস্যাগুলো কী?
এই চুক্তির প্রধান উদ্বেগগুলো নিচে দেওয়া হলো:
অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্য: আদানির কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনা হবে প্রায় ১৫.৮৫ টাকায়, যা ভারত সরকার বা অন্যান্য দেশীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিটের দাম ১২ টাকা এবং মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দাম ৮.৫৩ টাকা। এই বিশাল পার্থক্য বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের যৌক্তিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
কয়লার উচ্চমূল্য: চুক্তিতে বলা আছে, আদানি গ্রুপকে কয়লার প্রকৃত মূল্যের পরিবর্তে ‘মূল্যসূচক’ অনুযায়ী দাম দিতে হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম কমলেও বাংলাদেশকে উচ্চমূল্যেই তা ক্রয় করতে হবে। এটি একতরফা একটি শর্ত, যা দেশের ওপর আর্থিক চাপ বাড়াবে।
দীর্ঘমেয়াদি বাধ্যবাধকতা: ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎ কেনার এই চুক্তি বাংলাদেশকে এক দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক দায়বদ্ধতায় আবদ্ধ করেছে। কোনো কারণে যদি চুক্তি বাতিলও করা হয়, তবে বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, যা দেশের বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি ঘটাবে। এই ‘ফাঁদ’ থেকে বের হওয়া কঠিন।
কেন এমন চুক্তি?
এই চুক্তিটি কেন এমন শর্তে স্বাক্ষরিত হলো, তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ দানা বেঁধেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়ম অনুযায়ী, এমন কোনো চুক্তি সচরাচর হয় না যেখানে একটি পক্ষকে এতটা ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এটি যেন এক ‘প্রতিশোধের’ মতোই, যেখানে দেশের স্বার্থের চেয়ে অন্য কিছুকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যৎ কী?
দেশের বিদ্যুৎ খাতের এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চুক্তির শর্তগুলো পুনর্মূল্যায়ন করা জরুরি। আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এই চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে। অথবা, আদানির সঙ্গে নতুন করে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেনার দাম ও অন্যান্য শর্ত পরিবর্তন করা সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।
এই চুক্তির প্রভাব কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি দেশের সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের ওপর এক অদৃশ্য চাপ সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের চুক্তি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপরও বোঝা হয়ে থাকবে। তাই, এই বিষয়ে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য।