ইশরাত জান্নাত নাজমিন: বাংলাদেশের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তির দলবদ্ধভাবে হেনস্থার ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির একটি সহযোগী সংগঠনের একদল নেতাকর্মীর এ ধরনের ‘মব সন্ত্রাসের’ সাথে জড়িত হবার ঘটনাও নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রোববার ঢাকার উত্তরায় তার নিজের বাসায় ঢুকে ওই ব্যক্তিরা মি. হুদাকে বের করে এনে হেনস্থা করেন এবং এক পর্যায়ে তার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে দেন ও তার মুখে জুতা দিয়ে আঘাত করেন। এ সময় তার গায়ে ডিম ছুড়ে মারা হয়।
পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতেই এ ঘটনার পর তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই তাকে বিএনপির করা একটি মামলায় গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
মি. হুদার ওপর আক্রমণকারীরা নিজেদের বিএনপির সহযোগী একটি সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন এবং বিএনপি তাদের রাজনৈতিক পরিচয় অস্বীকারও করেনি।
প্রশ্ন উঠেছে, গত তিনটি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও বিএনপি কিংবা দলটির নেতা কর্মীরা কেন এ ধরনের মব সন্ত্রাসে জড়ালো।
দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অবশ্য বলছেন, এর সঙ্গে দল হিসেবে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা নেই।
“এটি বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা, যার দায় বিএনপির ওপর চাপানোর সুযোগ নেই। আমরা এগুলো সমর্থন করি না। দলের কেউ জড়িত থাকলে আমরা অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি.আহমদ।
ঘটনার পর রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ওই ঘটনায় ‘মব’ সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সকলকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল আলম চৌধুরী বলছেন, সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘মব সন্ত্রাসকে’ আস্কারা দিয়ে এ পর্যায়ে এনেছে।
মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন মনে করেন,এর দায় সরকারের ওপই বর্তায়।
তিনি বলছিলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের ‘মব সন্ত্রাস বা দলবদ্ধ সহিংসতা’ চলমান থাকার দায় সরকার এড়াতে পারে না।
“আইন আদালতকে পাশ কাটিয়ে এ অসভ্যতা চলতে পারে না,” উল্লেখ করেন তিনি।