বাংলাদেশে রাজনীতি ও আমার ভাবনাঃ

বাংলাদেশের রাজনীতিকে যদি দুটি শব্দে সংজ্ঞায়িত করতে হয়, তবে তা হবে— উন্নয়ন বনাম ধ্বংস। এই দুই মেরুর রাজনীতিকে প্রতিনিধিত্ব করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। একদিকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও উন্নয়নের রাজনীতি করছে; অন্যদিকে বিএনপি, যারা ক্ষমতায় এলে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও নারী নির্যাতনের রাজত্ব কায়েম করে।

আওয়ামী লীগের আমলের উন্নয়নের ধারাবাহিকতাঃ

২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে উন্নয়নের যে ধারা দিয়েছে, তা এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়েছে— গত এক দশকে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬-৭% এর মধ্যে ছিল, যা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বেশি।

পদ্মা সেতু: নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিকে বদলে দিয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, কেবল পদ্মা সেতু থেকে দেশের জিডিপি ১.২% বৃদ্ধি পাবে।

মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেল: রাজধানীর যানজট নিরসন এবং চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।

বিদ্যুৎ খাত: ২০০৯ সালে যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল মাত্র ৪,০০০ মেগাওয়াট, বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৬,০০০ মেগাওয়াট।

ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিঃ

২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আজ দেশের প্রত্যন্ত গ্রামেও ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি।

এসব অর্জন কেবল অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, বরং মানুষের জীবনমানকে বদলে দিয়েছে।

বিএনপির সন্ত্রাসী রাজনীতি ধরনঃ

বিএনপির রাজনীতি মানেই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড। ২০১৩-১৪ সালের সহিংস আন্দোলনে তারা সারা দেশে ৫০০ এর বেশি পেট্রোল বোমার হামলা চালায়। মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০১৫ সালের শুরুর তিন মাসে বিএনপির আগুন সন্ত্রাসে প্রায় ১৫০ জন নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়।

গ্রামীণ জনপদে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীরা নিরীহ মানুষ হত্যা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, নারীদের ওপর যৌন সহিংসতা চালিয়েছে।

বিএনপি আমলের চাঁদাবাজি ও দুর্নীতিঃ

২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি ‘হাওয়া ভবন’কেন্দ্রিক দুর্নীতির সাম্রাজ্য তৈরি করে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল তখন ধারাবাহিকভাবে পাঁচ বছর বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করে।

খালেদা জিয়ার জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা প্রমাণ করেছে বিএনপি নেতারা এতিমদের টাকাও আত্মসাৎ করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি।

বিএনপির আমলে প্রতিটি সরকারি টেন্ডার, প্রতিটি চাকরি বাণিজ্য, প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে চাঁদাবাজি আর লুটপাট চলেছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদল অস্ত্রবাজি, ভর্তি বাণিজ্য, সেশন জট ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে পুরো প্রজন্মকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।

বিএনপির নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের পরিসংখ্যানঃ

বিএনপির শাসনামলে নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান ছিল ভয়াবহ। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যানুসারে, ২০০১-২০০৬ মেয়াদে ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার ঘটনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সংখ্যালঘু নারীদের ওপর নির্যাতন ছিল নিয়মিত সংবাদ।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকার নারীর ক্ষমতায়নকে রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকারে এনেছে। বর্তমানে সংসদে নারী সদস্য সংখ্যা ৭৩ জন। নারী বিচারপতি, নারী পুলিশ কর্মকর্তা, নারী সেনা কর্মকর্তা— সর্বত্রই নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছে।

বিএনপির চলমান নির্বাচনবিরোধী ষড়যন্ত্রঃ

গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে বিএনপির ভূমিকা সবসময় নেতিবাচক। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও মাঝপথে সরে দাঁড়ায়, কখনো বয়কট করে, আবার কখনো বিদেশি প্রভুদের দিয়ে চাপ সৃষ্টি করানোর চেষ্টা করে। জনগণের আস্থা হারানো দল গণতন্ত্রের কথা বললে তা হাস্যকর শোনায়।

২০১৪ সালের নির্বাচন তারা বয়কট করেছিল, ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েও জনগণের ভোট না পাওয়ায় ‘ভোট ডাকাতি’ নাটক সাজিয়েছিল। মূলত তারা জানে— জনগণ তাদের ভোট দেবে না। তার পাশাপাশি ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে আওয়ামীলীগ আবারো ক্ষমতায় বসে এবং দেশেকে আবারো নেতৃত্ব দেওয়ার মহা সুযোগ লাভ করে। তবে সে নির্বাচনেও বিএনপি ভোট পাবে না, জনগনের আস্থা না পেয়ে ভোট বয়কট করে। আসলে তারা দেশের মানুষকে কখনোই ভালোবাসে নি। তারা কেবল আছে সকল ধ্বংসাত্মক কাজে।

আমার রাজনীতি ভাবনাঃ

আমার কাছে রাজনীতি মানে জনসেবা। মানুষের মনের ভাষা বোঝা,মানুষের জন্য কাজ করা এবং মানুষের দুখ কষ্ট লাঘবে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। আওয়ামী লীগ যেখানে মানুষের উন্নয়নে কাজ করছে, সেখানেই বিএনপি কাজ করছে ধ্বংসে। আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতু উপহার দিয়েছে, বিএনপি দিয়েছে হাওয়া ভবন। আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছে, বিএনপি আগুন দিয়ে জ্বালিয়েছে নিরীহ মানুষকে।

আমরা চাই— বাংলাদেশে উন্নয়ন, শান্তি আর গণতন্ত্র টিকে থাকুক। এজন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার সরকারই একমাত্র ভরসা। শেখ হাসিনা সরকারে আমলেই বাংলাদেশ নিজেকে অনন্য মাত্রায় আবিস্কার করে। আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলাম। তবে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে শেখ হাসিনাকে দেশ ত্যাগ করার মধ্য দিয়ে তারা এ অপ্রতিরোধ্য যাত্রা থামাতে চেয়েছে অথচ বাস্তবতা হলো এখনো মানুষ শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় চায় আবার।

যে দল এতিমের টাকা লুটে খায়, আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করে, নারী নির্যাতনকে রাজনীতির অংশ বানায়— তাদের হাতে রাষ্ট্র কখনো নিরাপদ নয়। তাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী দিনের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে।

Leave a Reply