ইশরাত জান্নাত নাজমিন: দোয়ারাবাজার উপজেলার চাঁদাবাজি ও মামলা বাণিজ্যের মূল হোতা দরবেশ খ্যাত, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক উপজেলা আহ্বায়ক, নরসিংপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, শামসুল হক নমু ও তার ক্যাডার মঞ্জুর আলম। তিনি তার গুটিকয়েক অনুগত কর্মীদের দিয়ে সমাজে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ও দরবেশ পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন পাকাপোক্ত চাঁদাবাজ ও মামলাবাজ, তিনি তারা চাঁদাবাজি ও চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করেন সাবেক যুবলীগ সন্ত্রাস মঞ্জুর আলমকে দিয়ে। মঞ্জুর আলম যাতে প্রসাসনিক কোন জটিলতায় না ভোগেন সে জন্য তাকে যুবদলের পদ ভাগিয়ে নিতে সহায়তা করেন। উক্ত উপজেলায় মঞ্জুর আলম বুংগার মালামাল ও চোরাকারবারের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত যার ১০% চাঁদা নমু পান এবং এলাকার নিরীহ গরীব মানুষের মামলার বেড়াজাল কিংবা মামলার ভয় দেখিয়ে ব্যাপকভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।
ভারত থেকে চোরাই পথে অবৈধভাবে আনা গরু, ছাগল, মহিষ, গাছ সহ বুংগাইর মালামাল আনা-নেওয়ার নিরাপদ রোড হলো বোগলা বাজার, বাংলাবাজার ও নরসিংপুর। চোরাই পথে আনা পশু ও মালামালের বৈধতা দেয়া হয় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোর বাজার থেকে। সাম্প্রতিক নিলামগুলো লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, সংশ্লিষ্ট এলাকার ছোট ছোট বাজারের, হাটের কিংবা ঘাটের নিলাম কয়েক লক্ষ টাকা থেকে কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত। যে এলাকায় যতো বেশি চোরাকারবার হয় সে এলাকার নিলাম ততো বেশি হয়।
এই চোরা চালান গুলার নিরাপদ রোডগুলো হলো, নরসিংপুরের শ্রীপুর থেকে কোনাকোনি বালিউরা-ছনখাইর হয়ে ছাতক, বাংলাবাজারে শ্যামার গাও হয়ে ব্রিটিশ, বোগলা বাজার ও লক্ষিপুরও সেইম ব্রিটিশ হয়ে দোয়ারাবাজার হয়ে সারাদেশে সাপ্লাই হয়। এবং বাংলাদেশ থেকেও বিভিন্ন পণ্য অবৈধভাবে সে দেশে সাপ্লাই হয় যেমন মাছ, চায়না থেকে আনা পেঁয়াজ রসুন ইত্যাদি
চোরাচালানের এই সাপ্লাই চেইন মেইনটেইন করে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটগুলোর মূল নিয়ন্ত্রণ আগে থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কাছেই ছিল যেটা আগে থেকেই মঞ্জুর আলম নিয়ন্ত্রন করত। কিন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে মূল নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে থাকলেও এই সিন্ডিকেটগুলোর ফ্রন্ট লাইনে নিয়ে আসছে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু লোভি বিএনপি নেতৃবৃন্দকে এবং তাদের অনুসারীদেরকে। তাছাড়া স্থানভেদে তারা কতিপয় সমন্বয়ক ও জামাত কর্মীদেরও সম্পৃক্ত রাখছে মোটা অংকের টাকা ও চাদার বিনিময়ে। যার ফলে স্বৈরাচার হাসিনা পালিয়ে গেলে তার সিস্টেম অপরিবর্তিত থেকেই যায়। সেই অপরিবর্তিত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি হাতবদল হয়ে চলে আসে বিএনপির তথাকথিত সমালোচিত নেতা শামসুল হক নমুর নেতৃত্বে একদল চাঁদাবাজদের হাতে। এই সিন্ডিকেট কয়েকটি ভাগে কাজ করে যার মূল সমন্বয় আওয়ামী লীগের হাতেই। যার দরুন দেখবেন স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের নেতারা বুক ফুলিয়ে ঘুরাঘুরি করছে। সিন্ডিকেট গুলো হলো–
১. চোরাকারবারি অসাধু ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিবর্গ
২. মালামাল আনা-নেওয়ার কাজে সংশ্লিষ্ট একদল শ্রমিক
৩. বিভিন্ন রোডে পরিবহনের নিরাপত্তা প্রদানে প্রভাবশালী বিভিন্ন নেতাকর্মী
৪. প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে নিরাপদ পরিবহন নিশ্চিত করতে উচ্চ পদধারী রাজনৈতিক নেতা।
৫. প্রশাসনের অসাধু কিছু কর্মকর্তা
সম্প্রতি স্থানীয় বোগলা বাজারে ২ পক্ষের সংঘর্ষে বিষয়টি জনসাধারণের মাঝে স্পষ্ট প্রকাশ পায়। বিগত, ২৯ শে মার্চ ২০২৫ ঈদের আগের রাত, চোরাকারবার ও চাঁদাবাজির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে সিলেটের তথাকথিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সালেহ মোঃ নাসিম এর সাথে স্থানীয় কিছু ছাত্রদল কর্মীর বাকবিতন্ডায় সংঘাতের সুত্রপাত ঘটে। উল্লেখ্য তথাকথিত সমন্বয়ক এর আগেও সমন্বয়ক পরিচয়ে এলাকায় বেশ কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল তার মধ্যে অন্যতম মোটরসাইকেল মহরার সময় ছাতকের সুরমা ব্রিজের টুল বক্সে ভাংচুর, সিলেটে ইফতার মাহফিলেও গন্ডগোল সৃষ্টি, সুনামগঞ্জে টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্টদের কমিটিতে যায়গা করে দেয়া। সদ্য এস এস সি পাশ করা তার ভাগিনা ফয়সলকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা ইত্যাদি
উক্ত চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:- বোগলাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা মিলন হক যিনি প্রতি চালানেই প্রায় ১০-১৫ লক্ষ টাকা বুঝে নেন, আওয়ামী লীগ নেতা রফিক খাঁন, ডামি নির্বাচনে ছাত্রলীগ থেকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বনে যাওয়া বোগলাবাজারের আবুবকর সিদ্দিক ও তার ভাই স্থানীয় মেম্বার -প্রতি চালানে তারাও ৮-১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শামসুল হক নমু যিনি উর্ধতন চ্যানেল মেইনটেইন করে প্রতি চালানে ২-৩ লাখ, এবং নমু সাহেবের বিভিন্ন রোডে কাজ করা কর্মীরাও ক্ষেত্র ভেদে ১০ হাজার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করেন, HSC শিক্ষার্থী ফসয়ল(যুগ্ম আহ্বায়ক সুনামগঞ্জ জেলা) তার মামা তথাকথিত বহুল সমালোচিত সমন্বয়ক নাসিমের হয়ে প্রায় প্রতি চালানে ১-২ লাখ টাকা নেন। উল্লেখ্য নাসিম সমন্বয়ক পরিচয়ে উক্ত সিন্ডিকেটদের বাজারগুলোর নিলাম পাইয়ে দিতে টাকা নেন বলে লোকমুখে বলাবলি হচ্ছে।
৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উক্ত সিন্ডিকেটের মূল হুতা আওয়ামী লীগের নেতার পরিবর্তে ফ্রন্ট লাইনে চলে আসেন বিএনপি নেতা নমু ও তার একান্ত কিছু কর্মী যাদের দিয়ে স্থানীয়ভাবে সিন্ডিকেট মেইনটেইন করেন এবং তিনি জনসাধারণের আড়ালে থাকেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো উক্ত সিন্ডিকেট পিছন থেকে নিয়ন্ত্রণ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ। তাছাড়া তিনি স্বৈরাচারী হাসিনার আমলেও আওয়ামী লীগের সাথে আতাত করে আন্দোলন স্তিমিত রাখতেন। আন্দোলন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে তিনি চলে যান তাবলীগে। তার সুবাদে তিনি হঠাৎ আচমকাই ক্লিন সেইভড থেকে সাদা দাড়ি রাখা শুরু করেন। তার একান্ত কর্মীদের মাধ্যমে প্রচার করা শুরু করেন যে ক্লিন ইমেজ নেতা, পীর- দরবেশ। একটা পর্যায়ে প্রচারের ফলে দরবেশ তকমা প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়। সেই খ্যাতি ও বিএনপির পদবির প্রভাব খাটিয়ে তিনি প্রশাসন মেইনটেইন করেন। এই আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেটে ওনার মূল কাজই হলো প্রশাসন মেইনটেইন করা ও তার একান্ত কর্মীদের মাধ্যমে পরিবহন চ্যানেলের নিরাপত্তা প্রদান করা।
তাছাড়াও নমু’র মামলা বাণিজ্যের মাধ্যমেও থানার দালালি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টিও জনসম্মুখে আসছে। সম্প্রতি অপারেশন ডেভিল হান্টে তার মামলা বাণিজ্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠ। কথিত আছে স্থানীয় নিরীহ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের গ্রেফতার ও লিস্টের ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তাছাড়া একটু প্রভাবশালীদের টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে আনতে থানায় লবিং করছেন। আওয়ামী লীগের রাঘববোয়ালদের টাকার বিনিময়ে নিরাপদে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ দিচ্ছেন ও গ্রেফতার এড়ানোর গ্যারান্টি দিচ্ছেন।
শামসুল হক নমুর পাশ্ববর্তী ২ গ্রাম লেদারকান্দি ও মুকিরগাওয়ের বাসিন্দাদের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রামের মধ্যে মারামারি সৃষ্টি হলে রাতের অন্ধকারে একটি গ্রামের সাথে টাকার বিনিময়ে আতাত করে থানায় লবিং করে মামলা বসিয়ে দেন। পরবর্তীতে অন্য গ্রামের বাসিন্দাদের মামলার ভয় দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে মিমাংসা করতে ও মামলা তুলে দিতে প্রকৃয়া শুরু করেন। তার এই মিমাংসার বিষয়টিও তিনি প্রচার করা শুরু করেন দরবেশ কতো মহান, ঝামেলা সলভ করে দিচ্ছেন। প্রকৃত ভুক্তভোগীরা বলাবলি করতেছে যে গোপনে টাকা খেয়ে দালালি করে প্রকাশ্যে দরবেশি প্রচার করে নির্বাচনী ক্যাশ করতে চাচ্ছেন।
উপরোল্লিখিত ঘটনা ছাড়াও তিনি এর আগেও উক্ত এলাকায় ২ গ্রামের মারামারিতে মামলা বাণিজ্য করেছেন এবং মিমাংসার নামেও করেছেন বাণিজ্য। মিমাংসার নাম ধরে তার কিছু পেইড কর্মী(যাদের চোরাচালানে চাঁদাবাজির ব্যবস্থা করে দিছেন) প্রচার করা শুরু করছে আমাদের দরবেশ পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। এতে ফুয়েল দিচ্ছে কিছু সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগ ও জামাত কর্মী।
