ইয়াছমিন বেগম: বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিয়ন্ত্রিত ক্রিকেট অঙ্গনে ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ক্রীড়াবিদ, কোচ এবং সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করছেন যে, বিসিবির অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে দেশের ক্রিকেটসহ সমগ্র ক্রীড়াঙ্গন ধ্বংসের মুখে। তবে, এসব অনিয়ম রোধে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না, যা ক্রীড়াপ্রেমী মহলে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
বিসিবির বিরুদ্ধে তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ না দেওয়া, টেন্ডার কারচুপি, জাতীয় দলে স্বজনপ্রীতি, ফান্ড তছরুপ এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার মতো অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে শোনা গেলেও এগুলো রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গত কয়েক বছরে জাতীয় দলের পারফরম্যান্স ধারাবাহিকভাবে নিম্নমুখী, যা প্রশাসনিক ব্যর্থতারই ইঙ্গিত দেয়।
এছাড়াও, ঘরোয়া ক্রিকেট লিগ, age-level টুর্নামেন্ট এবং ক্রিকেটার উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহার না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় অভিযোগ করেন যে, যোগ্যতার ভিত্তিতে দল নির্বাচন না হয়ে ‘লবিং’ ও রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করছে।
বিসিবির দুর্নীতি ও ব্যর্থতা নিয়ে গণমাধ্যমে বারবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সরকার বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো শক্ত অবস্থান দেখা যায়নি। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কখনোই বিসিবির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ক্রীড়া বিশ্লেষকরা বলছেন, বিসিবিতে রাজনৈতিক প্রভাব ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দুর্নীতি বাড়ার মূল কারণ। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ক্রিকেটের মতো জনপ্রিয় খেলাকে দুর্নীতির আখড়া বানিয়ে রাখায় সরকারের নীরবতা কি ইচ্ছাকৃত?
বাংলাদেশের ক্রিকেট যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতামূলক হওয়ার কথা, তখন বিসিবির অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও অদক্ষতা দেশের ক্রীড়া ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। ক্রিকেটারদের উন্নয়ন প্রকল্প, স্টেডিয়াম ব্যবস্থাপনা এবং যুব ক্রিকেটে বিনিয়োগ—সব ক্ষেত্রেই অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
ক্রীড়া সংগঠনগুলো দাবি করছে, বিসিবির কার্যক্রম তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং একটি স্বাধীন ও পেশাদার কমিটি গঠন করে ক্রিকেট ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠন করা হোক।
সোশ্যাল মিডিয়া এবং ক্রীড়া কমিউনিটিতে বিসিবির দুর্নীতি ও সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। ক্রীড়াপ্রেমী ও সাবেক খেলোয়াড়রা বলছেন, “ক্রিকেট আমাদের গর্ব, কিন্তু দুর্নীতির কারণে এটি এখন আমাদের লজ্জা।”
দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে বাঁচাতে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিসিবির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ, দুর্নীতির তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।
বিসিবির দুর্নীতি ও অপশাসন বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসকে কলঙ্কিত করছে। সরকার যদি এখনই এই সংকট সমাধানে এগিয়ে না আসে, তবে ক্রিকেটসহ অন্যান্য খেলাধুলার ভবিষ্যৎ অন্ধকারেই রয়ে যাবে।