কাজী তৌফিক এলাহী তারেক : রাজধানীর মিরপুর এলাকায় ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী একাধিক ব্যবসায়ী দাবি করেছেন, স্থানীয় ছাত্রদল নেতা রায়হান আহমেদ নিয়মিতভাবে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে আসছেন। এই ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রায়হান ও তার অনুসারীরা নিয়মিত দোকান ও ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা আদায় করে থাকেন। কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়। এমনকি দোকানপাট ভাঙচুরেরও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী।
একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা ছোট ব্যবসা করে দিন চলে। কিন্তু মাসের শুরুতেই রায়হানের লোকজন এসে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দাবি করে। না দিলে ব্যবসা চালানোই কঠিন হয়ে যায়। পুলিশের কাছেও কয়েকবার অভিযোগ করেছি, কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রায়হান আহমেদ মিরপুর থানার অধীনে ছাত্রদলের একজন সক্রিয় নেতা। বিগত কয়েক বছর ধরে তিনি এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আসছিলেন। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, চাঁদাবাজি ছাড়াও তিনি জমি দখল, মাদক কারবার ও টেন্ডারবাজির সঙ্গেও জড়িত।
একজন সমাজকর্মী জানান, “ছাত্র রাজনীতির নামে কিছু যুবক এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। রায়হান তাদের মধ্যে অন্যতম। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”
তবে স্থানীয় থানার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, রায়হান রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। ফলে সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। একাধিক বাসিন্দা জানান, “প্রশাসন যদি প্রথম থেকেই ব্যবস্থা নিত, তাহলে এতদূর গড়াত না। এখন পুরো এলাকাই তার দখলে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্ররাজনীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বর্তমান সময়ে কিছু নেতাকর্মী নিজেদের স্বার্থে রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এর ফলে ছাত্ররাজনীতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব হাসান বলেন, “ছাত্রদল হোক বা অন্য যে কোনো ছাত্রসংগঠন—তাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত শিক্ষা, সংগঠন ও ন্যায়ের পক্ষে লড়াই। কিন্তু কিছু ব্যক্তি সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত এমন অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া।”
এ ঘটনায় স্থানীয়রা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাদের দাবি, রায়হান আহমেদ ও তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ সাধারণ মানুষের ওপর দখলদারিত্ব কায়েম করতে সাহস না পায়।
প্রসঙ্গত, এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকেই প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করছেন। কেউ কেউ বলছেন, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে শুধু কথা নয়, কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল কীভাবে এই অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের আশা, অবিলম্বে চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট ভূমিকা থাকবে।