ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ: দেশকে মেধাশূন্য করার পায়তারা?

ক্রাইম; দর্পন; ক্রাইম দর্পন; crime; crimedorpon; crimedarpan; dorpon; darpan; The Weekly Crime Dorpon; the weekly crime darpan; crimedorpon.com;

মাসুদা আক্তার: বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রশ্নফাঁস একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে একাধিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই এটিকে “দেশকে মেধাশূন্য করার ষড়যন্ত্র” বলে উল্লেখ করছেন, যেখানে প্রকৃত মেধাবীরা পিছিয়ে পড়ছে এবং অসাধু চক্র লাভবান হচ্ছে।

গত সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠিত পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তদন্তে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের ছাত্রলীগ নেতা। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রশ্নপত্রের ডিজিটাল কপি বাইরের একটি কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট গ্রুপে বিক্রি করেছেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ও জবাবদিহি দাবি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তদন্তের আশ্বাস দিলেও এখনো কোনো অগ্রগতি প্রকাশ করা হয়নি।


  • অনেক শিক্ষার্থী জানান, “পরিশ্রমী শিক্ষার্থীরা হতাশায় ভুগছে। প্রশ্নফাঁসের কারণে মেধার মূল্য হারাচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা।”
  • অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এভাবে যদি পরীক্ষায় অসততা বাড়ে, তাহলে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।”
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের মতে, “প্রশ্নফাঁস শুধু একটি অপরাধই নয়, এটি জাতির মেরুদণ্ড ভাঙার সামিল। এভাবে মেধাহীন প্রজন্ম গড়ে উঠলে দেশ পিছিয়ে যাবে।”
  • শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ড. ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, “প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ছাত্রসংগঠনের নেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ উদ্বেগজনক। এটা প্রমাণ করে, শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতি কতটা গভীরে প্রোথিত।”
  • ছাত্রলীগের এক নেতা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এটি বিরোধী মহলের ষড়যন্ত্র। আমাদের সংগঠন শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে।”
  • তবে অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত নেতাকে সংগঠন থেকে সাময়িক বরখাস্তের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

  • বিরোধী রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠনগুলি দাবি করছে, “ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাদের প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকা নতুন নয়। এভাবে একটি অসাধু গোষ্ঠী শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে।”
  • সমাজমাধ্যমে অনেক ব্যবহারকারী প্রশ্ন তুলেছেন, “কেন বারবার ছাত্রলীগ নেতাদের নাম এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত হয়? এটি কি দেশের মেধা ধ্বংসের পরিকল্পিত চেষ্টা?”

২০১৫ সাল থেকে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাদের নাম বারবার শিরোনাম হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:
২০১৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িত ছিলেন কুমিল্লার এক ছাত্রলীগ নেতা। ২০২২ সালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস কেলেঙ্কারিতে ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা আটক হয়েছিলেন।

  • অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
  • বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।
  • ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও সংরক্ষণ, যাতে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ না থাকে।
  • শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা ও সচেতনতা কর্মসূচি জোরদার করা।
  • শিক্ষাঙ্গনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন।

শিক্ষা জাতির উন্নয়নে মেরুদণ্ড । কিন্তু প্রশ্নফাঁসের মতো ঘটনা এই ভিত্তিকে ক্ষয় করে দিচ্ছে। ছাত্রলীগের নেতা যদি শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে তা দেশের জন্য অশনিসংকেত। এ ধরনের অভিযোগের তদন্তে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করলেই কেবল মেধাভিত্তিক সমাজ গঠন সম্ভব। অন্যথায়, “মেধাশূন্য বাংলাদেশ” নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।