জামায়াতের উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড: দেশের জন্য হুমকি

ক্রাইম; দর্পন; ক্রাইম দর্পন; crime; crimedorpon; crimedarpan; dorpon; darpan; The Weekly Crime Dorpon; the weekly crime darpan; crimedorpon.com;

ইসরাত জান্নাত নাজমিন: বাংলাদেশের স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো জামায়াতে ইসলামীর উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এই সংগঠনটি ধর্মের নামে রাজনৈতিক ফায়দা লুটেছে, সন্ত্রাস ও সহিংসতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় জামায়াতের কার্যক্রম শুধু রাজনৈতিক সন্ত্রাসেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি এখন দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সামাজিক সম্প্রীতির জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী ও তার সহযোগী সংগঠন আল-বদর, আল-শামস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে গণহত্যা, নারী নির্যাতন ও বুদ্ধিজীবী হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়। তাদের নৃশংসতার ইতিহাস দেশবাসীর কাছে আজও অমোচনীয়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের অনেক নেতার ফাঁসি কার্যকর হলেও সংগঠনটি এখনও তার আদর্শিক ভিত্তি থেকে সরে আসেনি। বরং, নতুন প্রজন্মকে উগ্রবাদে জড়িত করার মাধ্যমে তারা আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
জামায়াতে ইসলামী ধর্মের নামে একটি বিশেষ রাজনৈতিক এজেন্ডা চালিয়ে যাচ্ছে, যা প্রকৃত ইসলামের শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা মাদ্রাসা, মসজিদ ও সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে তরুণদের মাঝে উগ্রবাদী মতাদর্শ ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের প্রোপাগান্ডায় গণতন্ত্র, নারী শিক্ষা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকারকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়, যা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে নষ্ট করছে।
জামায়াত ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির বারবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সহিংসতা, বিরোধী মত দমন, এমনকি হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায় তাদের সদস্যরা অভিযুক্ত। এছাড়াও, বিদেশি উৎস থেকে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ব্যয় করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রিপোর্টে বারবারই জামায়াতের সঙ্গে জঙ্গি গোষ্ঠীর যোগসূত্রের প্রমাণ মিলেছে।
জামায়াতের উগ্রবাদী কার্যক্রম রুখতে কঠোর আইনি পদক্ষেপ প্রয়োজন। শুধু আদালতের রায়ে নয়, সামাজিকভাবে তাদের বিচ্ছিন্ন করতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো, মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ এবং জামায়াতের অর্থায়নের উৎস বন্ধ করতে হবে। সর্বোপরি, তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করতে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।

জামায়াতে ইসলামীর উগ্রবাদী তৎপরতা শুধু একটি রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড নয়, এটি বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। এই সংগঠনটি অতীতের মতোই ধর্মের নামে বিভেদ ও সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে। রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তর থেকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া সময়ের দাবি। নইলে এই উগ্রবাদী গোষ্ঠী দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বারবার ঝুঁকিতে ফেলবে।