মোঃ হায়দার হোসেন: বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভূমিকা চিরস্মরণীয়— তবে নেতিবাচক অর্থে। ১৯৭১ সালে তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনে সরাসরি অংশ নিয়েছিল। কিন্তু আজও তারা নিজেদেরকে ‘ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠন’ হিসেবে পরিচয় দিলেও, তাদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়:
মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের নেতৃত্বে আল-বদর, আল-শামস বাহিনী গঠিত হয়, যারা বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণকবর ও বাঙালি নিধনে নৃশংস ভূমিকা রাখে। শিবির সদস্যরাও এই অপকর্মে অংশ নিয়েছিল। স্বাধীনতার পর জামায়াত কখনোই স্পষ্টভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান ঘোষণা করেনি, বরং তাদের নেতারা বারবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
আইনি সীমাবদ্ধতা এড়াতে জামায়াত-শিবির বিভিন্ন সময় নতুন নামে, নতুন কৌশলে কাজ করেছে। তারা মাদ্রাসা, সেবা সংস্থা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আড়ালে তাদের সংগঠন প্রসার করছে। বিশেষ করে শিবির ক্যাম্পাসগুলোতে ‘ইসলামী আন্দোলন’ নামে সক্রিয় থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের আদর্শ ছড়াচ্ছে। তাদের অনেক নেতা-কর্মী এখনও প্রকাশ্যে বা প্রচ্ছন্নভাবে স্বাধীনতা বিরোধী বক্তব্য দেয়, যা রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
জামায়াত-শিবিরের স্বাধীনতা বিরোধী ইতিহাস ও বর্তমান কার্যক্রমের কারণে রাষ্ট্র তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু তারা এখনও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিই নয়, সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসের এই ষড়যন্ত্র রুখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
জামায়াত-শিবিরের অতীত ও বর্তমান কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়— তারা কখনোই প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষের শক্তি ছিল না। বরং তারা ধর্মের নামে রাজনীতি করে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ চরিতার্থ করছে। এদের ছদ্মবেশী তৎপরতা রুখতে রাষ্ট্র ও সমাজকে সজাগ থাকতে হবে, যাতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও গণতান্ত্রিক ধারা অক্ষুণ্ণ থাকে।