ইয়াহইয়া আহমদ তানহার: পুলিশি আচরণে জাতি, বর্ণ ও লিঙ্গভিত্তিক পক্ষপাত একটি গভীরভাবে প্রোথিত কিন্তু প্রায়শই অস্বীকৃত সমস্যা, যা সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নিয়মিতভাবে বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার করে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, আদিবাসী জনগোষ্ঠী, নিম্নবর্ণ বা নিম্নবিত্তের মানুষদের প্রতি পুলিশের আচরণ প্রায়ই সহিংস, সন্দেহপ্রবণ ও অপমানজনক হয়, যা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে পুলিশি ব্যবস্থা সামাজিক পক্ষপাত থেকে মুক্ত নয়। গবেষণা ও মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা বলে, একই অপরাধে ধৃত হলে উচ্চবিত্ত বা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর সদস্যদের তুলনায় দলিত, আদিবাসী বা মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর পুলিশের দমনমূলক ব্যবস্থা বেশি কঠোর হয়। গ্রেফতারের সময় ভাষাগত বা ধর্মীয় পরিচয়কে অজুহাত করে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, হেফাজতে নির্যাতন বা এমনকি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও এই বৈষম্যের চরম প্রকাশ।
নারী ও লিঙ্গসংক্রান্ত পক্ষপাতও পুলিশি আচরণে সমানভাবে বিদ্যমান। ধর্ষণ, যৌন হয়রানি বা পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীদের অভিযোগ গ্রহণে পুলিশের অনীহা, অভিযুক্তের পক্ষপাতদুষ্ট তদন্ত বা ভুক্তভোগীকে দ্বিতীয়বারের মতো আঘাত দেওয়ার মতো মনোভাব এই ব্যবস্থার লিঙ্গগত পক্ষপাতকে স্পষ্ট করে। ট্রান্সজেন্ডার বা সমকামী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পুলিশি হয়রানি তো আরও বেশি চোখে পড়ার মতো—সমাজের প্রথাগত ধারণাকে পুলিশ প্রশাসন যেন নিজেদের আচরণে আরও শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠিত করে।
এই অদৃশ্য বৈষম্য দূর করতে পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণে সামাজিক সংবেদনশীলতা, মানবাধিকার শিক্ষা ও বৈচিত্র্য গ্রহণযোগ্যতার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। পাশাপাশি, পক্ষপাতমূলক আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। যতদিন না পুলিশি ব্যবস্থা এই গভীর সামাজিক অসাম্যকে চিহ্নিত করে তা দূর করার চেষ্টা করছে, ততদিন পুলিশের কাছে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা করা বৃথা। একটি সত্যিকার অর্থে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সংগত পুলিশ বাহিনী গঠনই পারে এই অদৃশ্য বৈষম্যের অবসান ঘটাতে।