মাছুমা বেগম: দুর্নীতি আজ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাঠামোয় এমনভাবে প্রোথিত যে তা এখন আর শুধুমাত্র কিছু অসাধু ব্যক্তির কর্মকাণ্ড বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বরং এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে, যার মূলে রয়েছে সরকারেরই কিছু নীতি ও সিদ্ধান্ত। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্বে ১২৫তম অবস্থানে রয়েছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
ব্যাংকিং খাত থেকে শুরু করে মেগা প্রকল্প, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য – প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্নীতির ছোবল লক্ষণীয়। বিএসআইসি ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা, পদ্মা সেতু ও রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের মতো মেগা প্রকল্পে বাজেট বৃদ্ধি ও স্বচ্ছতার অভাব – এসবই প্রশ্ন তুলেছে সরকারের নীতির প্রতি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যক্রম নিয়ে রয়েছে ব্যাপক সন্দেহ।
২০২৩ সালে দুদকের মামলা নিষ্পত্তির হার ছিল মাত্র ২৮%, যা সংস্থাটির কার্যকারিতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করে। সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব, তথ্য অধিকার আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়া, উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া – এসবই দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ভূমিকা রাখছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এত বড় আকারে দুর্নীতি সম্ভব হতো না।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে থাকা ব্যাক্তিরা যখন দুর্নীতিতে জড়িত থাকার পরও বিচারহীনতার সুবিধা পান, তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থা কমে যায়। আইনের শাসন ও জবাবদিহিতার অভাবই দুর্নীতিকে উৎসাহিত করছে। সরকার যদি সত্যিই দুর্নীতি দমন করতে চায়, তাহলে নীতিগত সংস্কার, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ও সব ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। নতুবা, দুর্নীতির এই ছড়াছড়ি বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিকে ব্যাহত করবে এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করে দেবে।