পুলিশি বর্বরতা: আইনের চোখে অন্ধ?

ক্রাইম; দর্পন; ক্রাইম দর্পন; crime; crimedorpon; crimedarpan; dorpon; darpan; The Weekly Crime Dorpon; the weekly crime darpan; crimedorpon.com;

ইয়াহইয়া আহমদ তানহার: বাংলাদেশে পুলিশি বর্বরতা একটি উদ্বেগজনক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা আইনের শাসন ও মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। পুলিশ রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে তাদের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, নির্যাতন ও বর্বরতা আইনের চোখকে অন্ধ করে তুলছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে পুলিশি বর্বরতার বেশ কিছু ঘটনা আলোচিত হয়েছে, যা সমাজে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে।

২০২০ সালে সিলেটে মজিদ নামে এক যুবকের মৃত্যু পুলিশি বর্বরতার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। মজিদকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়, যা নিয়ে ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে উঠে। একইভাবে, ২০২১ সালে নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে এক যুবক নিহত হন, যা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে পুলিশের জবাবদিহিতা নিয়ে। এসব ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তদন্তের দাবি ওঠে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তদন্তের ফলাফল নাগরিকদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

পুলিশি বর্বরতার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, পুলিশ বাহিনীতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব। দ্বিতীয়ত, পুলিশের কাজকর্মে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি। তৃতীয়ত, রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতির কারণে পুলিশের কিছু সদস্য আইনের ঊর্ধ্বে নিজেদের অবস্থান করে নেয়। এছাড়া, তদন্ত প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা ও স্বজনপ্রীতিও পুলিশি বর্বরতা রোধে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই সমস্যা সমাধানে কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। পুলিশ বাহিনীতে মানবাধিকার বিষয়ে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। পুলিশি বর্বরতার প্রতিটি ঘটনা স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, পুলিশের কাজকর্মে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।

পুলিশি বর্বরতা শুধু ব্যক্তির অধিকারই লঙ্ঘন করে না, এটি সমগ্র সমাজে আস্থা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিকে নষ্ট করে। বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পুলিশি বর্বরতা বন্ধ করা অপরিহার্য। শুধুমাত্র সচেতনতা, জবাবদিহিতা এবং কঠোর শাস্তির মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।