ফাহমিদা সুলতানা মিতা: সিলেট শহরে পিতা-মাতাহীন ভবঘুরে জীবনযাপন করে অসংখ্য পথশিশু। তারা কুড়িয়ে পাওয়া বোতল, প্লাস্টিক, লোহা কিংবা পুরনো জিনিস বিক্রি করে পেট চালায়। অনেক দূর দূরান্ত থেকে এসব জিনিস সংগ্রহ করে বিক্রি করে। তা দিয়ে তারা একবেলা খায় আর দুইবেলা নেশা করে।
পথ শিশুদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা ড্যানড্রাইট অ্যাডহেসিভ নামক আঠালো গাম দিয়ে নেশা করে। যে নেশা সবার কাছে ড্যান্ডি নামে পরিচিত। এই গামটি সাধারণত হার্ডওয়ারের দোকানে বিক্রি করা হয়। গামটি মূলত ছোটখাটো ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, চামড়া, প্লাস্টিকের পণ্য জোড়া লাগানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
তারা আরো বলে,সিলেট শহরের বিভিন্ন মুচির দোকান থেকে ৪০-৫০ টাকার বিনিময়ে অল্প করে এই গামটি সংগ্রহ করে। প্রথমে ঘ্রাণটা ভালো না লাগলেও ধীরে ধীরে তা অভ্যাসে পরিণত হয়। একবার এই গামটির ঘ্রাণ নিলে সারাদিন মাথা ঝিম ঝিম করে এবং কারো কথা মনে পড়ে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড্যানড্রাইট অ্যাডহেসিভ নামক এই গামটি টিউব এবং কৌটায় দু-ভাবে হার্ডওয়ারের দোকানে পাওয়া যায়। প্রতিটি টিউবের দাম ২৫০-৩৫০ টাকা আর কৌটার দাম ৪৫০-৭০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। দাম বেশি হওয়ায় আসক্ত এই পথ শিশুরা টিউব বা কৌটায় কেনে না। তারা যার যার প্রয়োজন অনুযায়ী মুচির দোকান থেকে সংগ্রহ করে।
সিলেটবাসীদের মতে, সিলেট শহরের বিভিন্ন কলোনির শিশুরা এই ড্যান্ডি নামক নেশাতে জড়িত। যাদের বয়স ৯ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। তারা পলিথিনের মধ্যে গাম লাগিয়ে অথবা বোতলের মধ্যে গাম দিয়ে এই নেশা করে থাকে।
সাধারণ জনগণের মতে, সিলেটের পুরাতন ব্রিজের আশেপাশে এবং রেল গেইটের আশেপাশে এইসব ড্যান্ডি খোর শিশুদের বেশি দেখা যায়। আর এইসব নেশাগ্রস্থ শিশুরা সিলেট শহরে চুরি ডাকাতির মতো বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত। ড্যান্ডি নামক এই নেশায় পথ শিশুরা ধীরে ধীরে আসক্ত হয় এবং তাদের বয়স যখন ১৮ বছরের উপরে চলে যায় তখন তাদের মধ্যে বিভিন্ন মানসিক রোগ দেখা দেয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সমস্যা রাতারাতি বন্ধ হবে না। এর জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। নেশাগ্রস্থ শিশুদের একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদেরকে শিক্ষার ব্যবস্থা করে আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে নেশাগ্রস্থ জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসতে হবে।